বিশেষ প্রতিবেদকঃ
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বলে জানা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব।
সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে ভাবনা, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সংস্কার প্রস্তাবে প্রতিক্রিয়াসহ আরও অনেক বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
বিবিসি বাংলা: কেমন আছেন আপনি?
বিএনপি মহাসচিব: ভালো, ভালো। অনেক ভালো।
বিবিসি বাংলা: প্রথমে একটু নির্বাচন দিয়ে শুরু করতে চাই। সম্প্রতি আপনি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, এই বছরের (২০২৫) জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। এটা কি একটা সম্ভাবনার কথা বলছেন, নাকি আপনারা চান যে, জুলাই-আগস্টে নির্বাচন হোক?
বিএনপি মহাসচিব: আমরা তো চাই আর্লি ইলেকশন। আগেও বলেছি আমরা। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার, যেটা ন্যূনতম সংস্কার, সেগুলো করে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। এটা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের যে অভিজ্ঞতা দেখেছি আমরা অতীতের কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টগুলোতে, তাতে করে এটা অসম্ভব কিছু না। এটা পসিবল যদি গভর্নমেন্ট চায় যে, ইলেকশন তারা করবে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে বা আগস্টের মধ্যে, তারা করতে পারে।
বিবিসি বাংলা: আপনারা কোনো সুনির্দিষ্ট কি বলবেন যে, আপনারা এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন চান?
বিএনপি মহাসচিব: আমরা সুনির্দিষ্ট সময় ওইভাবে বলতে চাই না এজন্য যে, তাতে তো লাভ হবে না। কারণ গভর্নমেন্টকেও চাইতে হবে। আলাদা পলিটিক্যাল পার্টিদেরকেও চাইতে হবে, সবাই মিলে এক সঙ্গে চাইতে হবে। তবে আমাদের দিক থেকে আমরা মনে করি, এটা কোনো অসম্ভব কিছু না। এটা খুবই সম্ভব এবং যতদ্রুত হয় ততই দেশের জন্য মঙ্গল।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু আপনাদের কোনো ডেডলাইন বা সময়সীমা নেই?
বিএনপি মহাসচিব: ডেডলাইন আমরা দেইনি এখনো।
বিবিসি বাংলা: যদি আপনারা দেখেন যে, নির্বাচনটা আপনারা যে সময়ের মধ্যে আশা করছেন, সেটা হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আপনাদের পদক্ষেপটা কী হবে?
বিএনপি মহাসচিব: সেক্ষেত্রে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের পার্টিতে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবে এবং আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলনে ছিলেন-আছেন, তাদের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করব। আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেব।
বিবিসি বাংলা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন যে, তারা কিছু সংস্কার কাজ করতে চান এবং সেই সংস্কার কাজগুলো শেষ হলে তখন তারা একটা নির্বাচনে যাবেন। তো আপনারা কি অপেক্ষা করতে রাজি আছেন সংস্কার কাজ শেষ করা পর্যন্ত?
বিএনপি মহাসচিব: আমরা আমাদের কথাগুলো স্পষ্ট করে বলে আসছি। বলেছি যে, উনি যতগুলো সংস্কারের মধ্যে হাত দিয়েছেন, অতগুলো সংস্কার করতে গেলে আপনার ১০ বছরের মধ্যেও শেষ হবে না। আর সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। দু বছর আগে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা দিয়েছি আমরা। তার মধ্যে এই বিষয়গুলো তো রয়েছে।
সংবিধান সংস্কারের বিষয় রয়েছে, জুডিশিয়াল কমিশনের কথা আমরা বলেছি, আমরা ইলেকশন কমিশনের কথা বলেছি, আমরা ব্যুরোক্রেসি সংস্কারের কথা বলেছি ৩১ দফায়, আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা বলেছি-এগুলো আমাদের সমস্ত বলা আছে। এখন সেক্ষেত্রে তারা যেটা করেছেন, সেটা কী রিপোর্ট নিয়ে আসছে আমরা জানি না।
যদি রিপোর্টগুলোয় দেখা যায় যে, আমাদের সঙ্গে মিলে গেছে, তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যেগুলো মিলবে না, সেগুলো তো একটা ন্যূনতম কনসেনসাস হতে হবে। তারপরে সেটা হতে হবে।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আপনি সংস্কার দিলেন, কিন্তু সেটাকে আপনার অ্যাপ্রুভ করবে কে? তার জন্য তো আইনগত যাদের অধিকার আছে, তারাই করতে পারবে। দ্যট ইজ পার্লামেন্ট।
পার্লামেন্ট ছাড়া কিন্তু কোনো সাংবিধানিক সংস্কার কঠিন হবে। এমনকি অন্যান্য বিষয় কতগুলা আছে, যেগুলা আপনার সংবিধানে কিছু কিছু পরিবর্তন আনার দরকার আছে। কিন্তু সেগুলা পার্লামেন্ট ছাড়া সম্ভব না। সেজন্যই আমরা মনে করি, দ্য সুনার দ্য ইলেকশন ইজ বেটার।