1. cityinsidernews25@gmail.com : সিটি ইনসাইডার নিউজ : সিটি ইনসাইডার নিউজ
  2. info@www.cityinsidernews.com : সিটি ইনসাইডার নিউজ :
শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

পবিত্র শবে মিরাজের গুরুত্ব

প্রতিনিধির নাম :
  • প্রকাশিত: রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৭৩ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম ডেস্কঃ

জগতের ইতিহাসে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টিকারী, অলৌকিক ও বিস্ময়কর ঘটনা মিরাজ। লাইলাতুল মিরাজ অর্থাৎ মিরাজের রজনী। আর মিরাজ অর্থ হচ্ছে ঊর্ধ্বগমন। এই পবিত্র রজনীতে বিশ্ব নবী, আকায়ে নামদার, তাজেদারে মদীনা, নবীদের নবী, রাহমাতাল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ (সা.) অলৌকিক উপায়ে উর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

রহমতের নবী (সা.) কর্তৃক সশরীরে সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় হযরত জিবরাইল (আ.) সাথে বিশেষ বাহন বোরাকে চড়ে মিরাজের রাতে সফর করেন। তিনি মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা হয়ে প্রথম আসমানে গমন করেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে একাকী রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ করে মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন। পাশাপাশি জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করে পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

হযরত রাসুল (সা.) বোরাকে চড়ে মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাসে গমন করেন। সেখানে সৃষ্টির প্রথম মানব ও প্রথম নবী হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে পৃথিবীতে নানান যুগে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী-রাসুলগণ সেখানে সমবেত হয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর ইমামতিতে নামাজ আদায়ের জন্য। রাসুল (সা.) মসজিদে আকসায় প্রবিষ্ট হলেন এবং সব নবী-রাসুলের সামনে ইমামতি করলেন। নামাজ আদায় শেষে অলৌকিক বাহনে করে মহাশূন্যের মেঘের স্তর, বরফের স্তর আর উষ্ণতার সব স্তর ভেদ করে প্রথম আসমানের দরজায় কড়া নাড়লেন, যেখানে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ মানবকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন হযরত আদম (আ.)। এর পর দ্বিতীয় আসমানে হযরত ঈসা (আ.) তৃতীয় আসমানে হযরত ইয়াহিয়া (আ.) চতুর্থ আসমানে হযরত ইদ্রিস (আ.) পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন (আ.) ষষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা (আ.) এবং সপ্তম আসমানে হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে তার দেখা হয়। ইতিহাসে আর কোনো নবী ও রাসুলের জীবনে এত বড় সৌভাগ্যের বিষয় আসেনি। সপ্তম আসমানে ওপরে বোরাক নামীয় বাহনের যাওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই সেখানে আরেকটি ভিন্ন বাহন ‘রফরফ’ নামে উপস্থিত হয় এবং রাসুল (সা.) তাতে আরোহণ করে আরও ঊর্ধ্বজগতের পানে ছুটে চলেছেন।

মিরাজের ঘটনাটি এমনই যেটি শুধুই বিশ্বাসের বিষয়। কোনো ধরনের যুক্তি দিয়ে এটিকে বিশ্বাস করানো প্রায় অসম্ভব। আর তা বুঝতে পারা যায় আরবের অবিশ্বাসীদের এ সংক্রান্ত অবিশ্বাস দেখে। প্রকারান্তরে শুধু মিরাজের ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গে এতে বিশ্বাস স্থাপন করে রাসুলের পরম সাথী হজরত আবু বকর (রা.) ‘সিদ্দিক’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন; যার পুরস্কারস্বরূপ রাসুল (সা.) তাকে বলেছিলেন- আন্তা আবাবাকরিন, আন্তা সিদ্দিক ওয়া আন্তা আতিকুল্লাহি মিনান্নার। অর্থাৎ, তুমি আবু বকর! তুমি সিদ্দিক! এবং তুমি নিঃসন্দেহে আল্লাহর জাহান্নাম থেকে চিরতরে মুক্ত।

পবিত্র কুরআনে সুরা বনি ইসরাঈলে মিরাজের ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল করিমে ইরশাদ করেন- ‘পবিত্র ও মহিমান্বিত সত্ত্বা ; যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলায় মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত পরিভ্রমণ করিয়েছেন। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত পরিমাণ বরকত দান করেছি। যাতে আমি তাঁকে আমার কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত- ১)।

গণ্ডীর কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণ লোকের সম্মুখে ভাষার মাধ্যমে আত্মা ও রুহের ব্যাখ্যা দেননি। কিন্তু বিশেষ মানুষের জ্ঞানচক্ষু ফুটিয়ে দিয়ে আত্মার প্রকৃত স্বরূপ প্রত্যক্ষভাবে মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছেন। ’ইমাম গাজ্জালী আত্মাকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন :  জীবাত্মা ও মানবাত্মা। তাঁর এ বিভাজন মুসলিম ও অমুসলিম সকল দার্শনিকের কাছে সমাদৃত হয়েছে। তিনি মানবাত্মা ও পরমাত্মার প্রতি অতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন যে, মানবাত্মা হলো বাদশা আর জীবাত্মা হলো তার উজির এবং বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো হলো লস্কর বা খেদমতগার। তাঁর মতে মানবাত্মার উৎকর্ষ সাধিত হলে মানুষের পূর্ণতা লাভ হয়।

মিরাজের সার্থকতা হচ্ছে স্থান, কাল ও গতির ওপর মানুষের যে অপরিসীম শক্তি ও অধিকার আছে, জড়শক্তিকে সে যে অনায়াসেই আয়ত্ত করতে পারে, এ মানুষেরই মধ্যে যে বিরাট এক অতি মানুষ ঘুমিয়ে আছে- এ কথা প্রমাণ করা। প্রিয় নবী (সা.) যেমন আধ্যাত্মিক জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ পূর্ণ মানব, তেমনিই মানবজাতির ইতিহাসেও তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ইনসানে কামেল ও সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ  হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কীভাবে আত্মসাধনার দ্বারা মানুষ ইহ ও পরকালে শ্বাশত মহাকল্যাণের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হতে পারে, মানবজাতিকে তিনি তা হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। মিরাজের মাধ্যমে প্রিয় নবীর (সা.) ‘আহমদ ও মুহাম্মদের’ নামের যথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি একাধারে চরম প্রশংসাকারী ও চরম প্রশংসিত।

মিরাজের প্রকৃত ঘটনা হলো, আল্লাহ তাআলা এক বিশেষ উদ্দেশ্যে অর্থাৎ তাঁর মহান কুদরত, অলৌকিক নিদর্শন, নবুয়তের সপক্ষে এক বিরাট আলামত, জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ, মুমিনদের জন্য জ্বলন্ত প্রমাণ, হেদায়েত, নিয়ামত ও রহমত, ঊর্ধ্বলোক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন, সৃষ্টিজগতের রহস্য উন্মোচন, স্বচক্ষে বেহেশত-দোজখ অবলোকন, পূর্ববতী নবী-রাসুলদের সঙ্গে পারস্পরিক সাক্ষাৎ ও পরিচিতি, সুবিশাল নভোমণ্ডল পরিভ্রমণ, মহাকাশ, আরশ, কুরসি, লওহ, কলম প্রভৃতি সামনাসামনি দেখিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর প্রিয় হাবিবকে নিজের একান্ত সান্নিধ্যে তুলে নিয়েছিলেন, যাতে তিনি প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইসলামের মর্মবাণী প্রচার করতে পারেন।

যদি মুসলমানদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুমহান জীবনাদর্শ ও মিরাজের শিক্ষামূলক অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি আদর্শ ও কল্যাণমুখী জাতি গঠনের রূপরেখা অনুযায়ী নীতি-নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করা যায়, তাহলেই বিশ্বমানবতার সর্বাঙ্গীণ সুখ-শান্তি, উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও মুক্তি সম্ভব হবে।

মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির উচ্চতম পর্যায় হচ্ছে, সে তার প্রভুর ওপর পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট এবং তার প্রভুও তার প্রতি সন্তুষ্ট আর এই পর্যায়ে যখন মুমিনের আত্মা উপনীত হয়, তখনই আল্লাহপাক তাকে মেরাজের মর্যাদায় ভূষিত করেন। আল্লাহ তাআলার কাছে এই প্রার্থনা করি, হে দয়াময় সৃষ্টিকর্তা! তুমি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠনবির উম্মত হবার কল্যাণে আমাদের দোষত্রুটি ক্ষমা করে তোমার রহমতের বারিধারায় আমাদেরকে সিক্ত করুন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট